News:

বিদ্যালয়ের তথ্য


অবস্থান: টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলাধীন ০১ নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া মৌজায় বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ০১ নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হতে ০৭ মিটার পশ্চিমে গিয়ে হাইওয়ে ধরে দক্ষিণ দিকে ৬০০ মিটার যাওয়ার পর বটতলা বাজার থেকে পূর্ব দিকে ১৮০ মিটার গিয়ে উত্তর দিকে মোড় ঘুরে ৬৬ মিটার দূরত্বের পর গ্রাম্য মেঠো রাস্তার পশ্চিম পাশে নয়নাবিরাম ছায়া সুনিবিড় পাখির কলকাকুলিতে মুখরিত পরিবেশে শির উচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাকুটিয়া পবালিক মডেল হাই স্কুল।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: বিদ্যালয়টির ইতিহাস বেশ পুরোনো। অবিভক্ত বাংলা আমলে বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ০১ নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া মৌজায় পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে কুম্ভিপাতার কোম্পানি ছিল। কুম্ভিপাতার আঞ্চলিক নাম গাদুলী পাতা। ফলে, কোম্পানির ঘরটি গাদুলী পাতার ঘর নামে পরিচিতি লাভ করে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ পরবর্তী কিছুকাল পরে ঘাটাইল কলেজ নির্মানের লক্ষ্যে সরকারী পৃষ্ঠপোষকগণ ঘরটির কাঠ ও টিন খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এই এলাকার জনহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ নারী শিক্ষার উত্তরণে লক্ষ্যে এখানে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কিছু টিন ও কাঠ রেখে যাওয়ার দাবি জানান এবং তারা সফল হন। উক্ত সফলতার সিদ্ধান্ত এই হয় যে, কোম্পানিটির ১১০ বান্ডেল টিনের মধ্যে ৩৫ বান্ডেল বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য এবং ১৫ বান্ডেল প্রগতি শিক্ষা সমিতির জন্য রেখে যাওয়া হবে। বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যে সকল ব্যক্তিবর্গ ভ‚মিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন মোঃ আঃ হক খান, মোঃ কাজিম উদ্দিন খান, মোঃ জোয়াদ আলী খান, এম.এম. শাহাদাত হোসেন, আজিজ নায়েব, মোঃ আরশেদ আলী মেম্বার এবং প্রগতি শিক্ষা সমিতির সদস্যসহ আরও অনেকে।

বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয় জায়গা নির্বাচন নিয়ে। ততকালীন সময় বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ০১ নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া মৌজায় বটতলা বাসস্ট্যন্ড থেকে পূর্ব-উত্তরে কর্মকার ও চাষী সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। এই সম্প্রদায়ের কিছু পরিত্যাক্ত জমি মিলে ছিল তমাল বৃক্ষের ছায়া সুনিবিড় একটি মাঠ। মাঠটি মধুর ভিটা নামে পরিচিত ছিল। এই মাঠটি বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের (যেমন-কামার, কুমার, জেলে, চাষী ইত্যাদি) বিনোদনের জায়গায় পরিনত হয়। প্রায়ই মাঠটিতে রুপবান পালা অনুষ্ঠিত হতো।

জন হিতৈষিব্যক্তিবর্গ এই পরিত্যাক্ত জমিটি বিদ্যালয়ের জন্য পাকাপাকি বন্দোবস্থ করে ভবন নির্মানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উক্ত ব্যক্তিবর্গ আশপাশের মহল্লা ও পাহাড়িয়া এলাকা থেকে বাঁশ, কাঠ, ধান, চাল, টাকা সংগ্রহ করে পরিত্যক্ত মাঠটি ক্রয় করে একটি টিনের ভবন নির্মানের মধ্য দিয়ে পাকুটিয়া পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য মাঠটির ০২ শতাংশ জায়গা জনাব ময়েজ উদ্দিন এর থেকে, ৪৩ শতাংশ জায়গা অধর চন্দ্র বাসব এর থেকে, রাস বিহারী আদিত্য থেকে ০১ শতাংশ, মোঃ ইদ্রিস আলী খান, মোঃ জুলমত খান, মতিয়ার রহমান খান থেকে ৪২ শতাংশসহ সর্বমোট ৮৮ শতাংশ জমির বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।

বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর জনবল নিয়োগ ও পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন মৃত আব্দুল হক খান। অন্যান্য সদস্য ছিলেন মৃত কাজিম উদ্দিন খান, এস.এম.শাহদাৎ হোসেন, জোয়াদ আলী খান, আজিজ নায়েব, দানেছ আলী ও জোবেদ আলী। বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উক্ত কমিটির দ্বারা প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন জনাব সেকান্দর আলী আকন্দ। প্রথম শিক্ষক/শিক্ষিকা ছিলেন আঃ ছোবহান মোগল, সুভাষ চন্দ্র ধর, হাসিনা আবেদীন এবং রাহেলা খানম। প্রথম চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন মোঃ আঃ কাদের এবং নারায়ন চন্দ্র।

এমপিওভুক্তি ও নাম পরিবর্তন: বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষার উত্তরণের জন্য ১৯৭৩ সালে পাকুটিয়া পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত হয়। এমপিও কোড ৪২০৪১১১৩০২। পরবর্তীতে বৈষম্য ভুলে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারতার কথা চিন্তা করে ছাত্রী অপ্রতুলতার কারণে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে সহশিক্ষা চালু করা হয় এবং নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পাকুটিয়া পাবলিক মডেল হাই স্কুল।

অবকাঠামো: বর্তমানে নয়ন জুড়ানো সবুজ ধান ক্ষেতের পশ্চিম পাশে গাছগাছালির স্নিগ্ধ ছায়ায় ঘেরা পাখির কলতানে মূখরিত অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমুখরিত নিরিবিলি পরিবেশে বিদ্যালয়টি সর্বমোট ৮৮ শতাংশ জায়গার উপর একটি একতলা পাকা ভবন, একটি দুইতলা পাকা ভবন এবং একটি আধা পাকা ভবনের সমন্বেয়ে শির উন্নত করে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয় মাঠের উত্তর পাশে দক্ষিণ মুখী ০১ নং ভবনে প্রধান শিক্ষককের কার্যালয় এবং শিক্ষক মিলনায়তন অবস্থিত। ০১ নং ভবনটির পশ্চিমের রোমটি পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। পরের আধা পাকা ০২ নং ভবন এবং মাঠের পশ্চিম পাশে পূর্বমূখী দোতলা ০৩ নং ভবনটিও পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

লাইব্রেরি: ০১ নং ভবনের শিক্ষক মিলনায়তন এর পরের রোমটিতে স্থাপন করা হয়েছে লাইব্রেরী। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে নিয়মিত বই, পত্র-পত্রিকা পড়ার সুযোগ পায়। বর্তামানে লাইব্রেরীতে ধর্মীয় বই রয়েছে ৪২টি, অভিধান বই (বাংলা ও ইংরেজি) রয়েছে ২৬টি, বাংলা ব্যাকরণ বই রয়েছে ৩২টি, ইংরেজি ব্যাকরণ বই ২৯টি, রাজনৈতিক, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ২৭০টি, কাব্যগ্রন্থ ১৫২টি, গল্পগ্রন্থ ২৮৭টি, নাটক ১২৩টি, উপন্যাস ২৬৫টি, শ্রেষ্ঠ রচনা সমগ্র রয়েছে ২৬টি সহ মোট ১২৪৩টি বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে লাইব্রেরিতে। এছাড়াও লাইব্রেরিতে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও শেখ রাসেল কর্নার। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর মহান অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সুযোগ পাচ্ছে।

বিজ্ঞানাগার: শিক্ষার্থীদের আধুনিক বিজ্ঞানে আগ্রহী ও মেধাবী হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে একটি বিজ্ঞানাগার। বিজ্ঞানাগারটি ০১ নং ভবনে লাইরেরি এর পরের রোমটিতে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস ও বিজ্ঞান চর্চা করে থাকে।

কম্পিউটার ল্যাব: আধুনিক যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যায়টিতে আছে ‘শেখ রাসেল আইসিটি ডিজিটাল ল্যাব’। ল্যাবটি সার্বক্ষণিক পরিচালনার জন্য রয়েছে একজন সুদক্ষ ল্যাব সহকারী। উক্ত ল্যাব সহকারী এবং সুযোগ্য শিক্ষকদের দ্বারা এখানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচলিত হয়। এছাড়াও কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকে। ল্যাবটি ০৩ নং ভবনের নিচ তলায় উত্তর পাশে অবস্থিত। এখানে রয়েছে ল্যাপটপ ১১টি, স্কানার ০১টি, ০২টি প্রিন্টার, এলইডি মনিটর ০১টি, থ্রিজি রাউটার ০১টি, সুইচ নেটওয়ার্ক ০১টি, কম্পিউটার টেবিল ১০টি, চেয়ার ৩০টি, ইন্সট্রাক্টর টেবিল ০১টি, ইন্সট্রাক্টর চেয়ার ০১টি, প্রজেক্টর ০১টি। এছাড়াও রয়েছে আরও প্রয়োজনীয় অনেক ডিজিটাল উপকরণ।

খেলার মাঠ: বিদ্যালয়টির দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে সুন্দর একটি খেলার মাঠ। মাঠটি তুলনামূলক একটু ছোট হলেও এখানে শিক্ষার্থীরা স্বল্প পরিসরে নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ও অন্যান্য খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যেই মাঠটি বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে প্রফুল্লতার সাথে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে পারে।

ক্যান্টিন: বিদ্যালয়টির ০৩ নং ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে ক্যান্টিন স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে শিক্ষর্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবশেনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ক্যান্টিন। এখানে শিক্ষার্থীরা খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে পারবে। শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য থাকবে আলাদা কর্নার।

শহীদ মিনার: বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই মাতৃভাষা এমনিতেই লাভ হয়নি। এর জন্য দিতে হয়েছে বুকের তাজা রক্ত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদদের স্মরণে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বিদ্যালয়ে নির্মান করা হয়েছে শহীদ মিনার যা বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের সামনে অবস্থিত। প্রতি বছর একুশে ফেব্রæয়ারিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাষা শদীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মাধ্যমে শহীদ দিবস পালন করে থাকেন। শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা: বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রেখে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গঠন করা হয়েছে ‘শৃঙ্খলা কমিটি’। সেই সাথে নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। যার দ্বারা প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা, মাঠ, অফিস ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য সকল স্থান নজরদারীতে রাখা হয়।

পিটিএ: শিক্ষার্থীদের মন ও মনশীলতার উন্নয়ন, পাঠে তাদের কৃতিত্ব ও অন্যান্য পজিটিভ দিকগুলোর উন্নয়নের জন্য গঠন করা হয়েছে পেরেন্ট টিচার্স এসোসিয়েশ। প্রতি মাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে ন্যূনতম একটি করে মিটিং করা হয়। এতে অভিভবকগণ তাদের সন্তানদের বিষয়ে সচেতন হতে পারেন এবং তাদের পড়াশোনাসহ আচরণগত অন্যান্য দিকগুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে পারেন। সেই সাথে শিক্ষকদের সাথে অভিভবকদের মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় যা শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়।

মূলমন্ত্র , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পাকুটিয়া পাবলিক মডেল হাই স্কুল এর রয়েছে নিজস্ব মূলমন্ত্র। বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভূমিকা রেখে আসছে।