News:

বিদ্যালয়ের ইতিহাস


প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: বিদ্যালয়টির ইতিহাস বেশ পুরোনো। অবিভক্ত বাংলা আমলে বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ০১ নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া মৌজায় পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে কুম্ভিপাতার কোম্পানি ছিল। কুম্ভিপাতার আঞ্চলিক নাম গাদুলী পাতা। ফলে, কোম্পানির ঘরটি গাদুলী পাতার ঘর নামে পরিচিতি লাভ করে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ পরবর্তী কিছুকাল পরে ঘাটাইল কলেজ নির্মানের লক্ষ্যে সরকারী পৃষ্ঠপোষকগণ ঘরটির কাঠ ও টিন খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এই এলাকার জনহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ নারী শিক্ষার উত্তরণে লক্ষ্যে এখানে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কিছু টিন ও কাঠ রেখে যাওয়ার দাবি জানান এবং তারা সফল হন। উক্ত সফলতার সিদ্ধান্ত এই হয় যে, কোম্পানিটির ১১০ বান্ডেল টিনের মধ্যে ৩৫ বান্ডেল বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য এবং ১৫ বান্ডেল প্রগতি শিক্ষা সমিতির জন্য রেখে যাওয়া হবে। বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যে সকল ব্যক্তিবর্গ ভ‚মিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন মোঃ আঃ হক খান, মোঃ কাজিম উদ্দিন খান, মোঃ জোয়াদ আলী খান, এম.এম. শাহাদাত হোসেন, আজিজ নায়েব, মোঃ আরশেদ আলী মেম্বার এবং প্রগতি শিক্ষা সমিতির সদস্যসহ আরও অনেকে।

বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয় জায়গা নির্বাচন নিয়ে। ততকালীন সময় বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ০১ নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া মৌজায় বটতলা বাসস্ট্যন্ড থেকে পূর্ব-উত্তরে কর্মকার ও চাষী সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। এই সম্প্রদায়ের কিছু পরিত্যাক্ত জমি মিলে ছিল তমাল বৃক্ষের ছায়া সুনিবিড় একটি মাঠ। মাঠটি মধুর ভিটা নামে পরিচিত ছিল। এই মাঠটি বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের (যেমন-কামার, কুমার, জেলে, চাষী ইত্যাদি) বিনোদনের জায়গায় পরিনত হয়। প্রায়ই মাঠটিতে রুপবান পালা অনুষ্ঠিত হতো।

জন হিতৈষিব্যক্তিবর্গ এই পরিত্যাক্ত জমিটি বিদ্যালয়ের জন্য পাকাপাকি বন্দোবস্থ করে ভবন নির্মানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উক্ত ব্যক্তিবর্গ আশপাশের মহল্লা ও পাহাড়িয়া এলাকা থেকে বাঁশ, কাঠ, ধান, চাল, টাকা সংগ্রহ করে পরিত্যক্ত মাঠটি ক্রয় করে একটি টিনের ভবন নির্মানের মধ্য দিয়ে পাকুটিয়া পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য মাঠটির ০২ শতাংশ জায়গা জনাব ময়েজ উদ্দিন এর থেকে, ৪৩ শতাংশ জায়গা অধর চন্দ্র বাসব এর থেকে, রাস বিহারী আদিত্য থেকে ০১ শতাংশ, মোঃ ইদ্রিস আলী খান, মোঃ জুলমত খান, মতিয়ার রহমান খান থেকে ৪২ শতাংশসহ সর্বমোট ৮৮ শতাংশ জমির বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।

বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর জনবল নিয়োগ ও পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন মৃত আব্দুল হক খান। অন্যান্য সদস্য ছিলেন মৃত কাজিম উদ্দিন খান, এস.এম.শাহদাৎ হোসেন, জোয়াদ আলী খান, আজিজ নায়েব, দানেছ আলী ও জোবেদ আলী। বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উক্ত কমিটির দ্বারা প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন জনাব সেকান্দর আলী আকন্দ। প্রথম শিক্ষক/শিক্ষিকা ছিলেন আঃ ছোবহান মোগল, সুভাষ চন্দ্র ধর, হাসিনা আবেদীন এবং রাহেলা খানম। প্রথম চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন মোঃ আঃ কাদের এবং নারায়ন চন্দ্র।

এমপিওভুক্তি ও নাম পরিবর্তন: বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষার উত্তরণের জন্য ১৯৭৩ সালে পাকুটিয়া পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত হয়। এমপিও কোড ৪২০৪১১১৩০২। পরবর্তীতে বৈষম্য ভুলে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারতার কথা চিন্তা করে ছাত্রী অপ্রতুলতার কারণে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে সহশিক্ষা চালু করা হয় এবং নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পাকুটিয়া পাবলিক মডেল হাই স্কুল।